• 11 Sep, 2025

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে কয়েক হাজার প্রাচীন নিদর্শন আছে। যা একটি মাত্র ভবনের মাঝে ভিতর একসাথে দেখা যায়। দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ জাদুঘরটি দেখে আসুন আর হারিয়ে যান আগের যুগে। দীর্ঘ সময় ধরে ব্লগের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন ও সুস্থ থাকুন।

যুগ যুগ ধরে বেড়ে ওঠার সমস্ত স্মৃতি চিহ্ন একসাথে আগলে রেখেছে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। এটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত। জাদুঘরটির প্রতিষ্ঠাকাল ১৯১৩ সালের ২০ই মার্চ, এবং উদ্বোধন করা হয় ১৯১৩ সালের ৭ই আগস্ট। জাদুঘরটি ১৯৮৩ সালের ১৭ই আগস্ট জাতীয় জাদুঘরের মর্যাদা পায়। প্রথম ঢাকা জাদুঘর নামে পথ চলা শুরু করে এখনকার বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরটি।

 

২০০০০ বর্গমিটারের জাদুঘরটির চারতলা ভবনে ৪৬টি গ্যালারিতে সংগৃহীত চিত্রের সংখ্যা প্রায় ৯৪,০০০। প্রতিটি চিত্রে রয়েছে একটি নিজস্ব অ্যাক্সেস নাম্বার। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংগৃহীত নমুনাগুলির প্রায় চার হাজার প্রকাশ্য দর্শনের জন্য ৪৩টি প্রদর্শনী হলে প্রদর্শিত । দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর সর্ববৃহৎ। 

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে যা দেখবেন

বাংলাদেশ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বড় ভূমিকা রাখে। জাদুঘরটির প্রতিটি গ্যালারিতে রয়েছে ইতিহাসের প্রাচীন অনেক নিদর্শন। যা দেখে বাংলাদেশের সভ্যতা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায়। বাংলাদেশ সম্পর্কে জানার জন্য শিক্ষাভ্রমণের উপযুক্ত একটি স্থান হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর পরিদর্শন করা উচিত। কারণ, তাদের অনেকের বাংলাদেশ ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সভ্যতার সম্পর্কে অজানা।

 

জাদুঘরের প্রবেশ তোরণের ভিতর দিয়েই জাদুঘরের মূল ভবন দেখতে পাওয়া যায়। মূল ভবনের দরজার দুইপাশে রয়েছে ২টি কামান। যা, দেখেই মনে কৌতূহলের বাসা বাঁধে। সুসজ্জিত কামান দুইটি প্রাচীন একটি নিদর্শন। ভবনের ভিতরে প্রবেশ পথেই দেখা মিলবে নান্দনিক দুটি ভাস্কর্যের। ভাস্কর্য দুটি দেখতেও চমৎকার। আর মূল ভবনের নিচতলায় দেখতে পাওয়া যায় খাবারের দোকান, ব্যাগ রাখার স্থান ও শুভেচ্ছা স্মারক লিপি। জাদুঘরটির কোথায় কী রয়েছে, তা দেখার জন্য সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠার সময় গ্যালারি নির্দেশক দেখতে পাবেন।

 

জাদুঘরের প্রথম তলায় বাংলাদেশের সব কিছু একসাথে তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করার জন্য প্রথম তলাই যথেষ্ট। কারণ, প্রথম তলায় দেখতে পাবেন বাংলাদেশের উপজাতিদের জীবনধারা, প্রাণী, সুন্দরবন, খনিজ শিলা, ভাস্কর্যসহ নানা নিদর্শন। যা দেখে আপনি হারিয়ে যেতে পারেন প্রাচীনকালে এবং মুগ্ধ হয়ে যাবেন বাংলাদেশের সংস্কৃতি দেখে। 

 

জাদুঘরে দ্বিতীয় তলায় দেখতে পাবেন বাংলাদেশের সভ্যতা ও ইতিহাসের ক্রমবিবর্তন। সোনার বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার বহু নিদর্শন সাজানো আছে দ্বিতীয় তলায়। বিভিন্ন চীনামাটির হস্তশিল্প, কুটিরশিল্প, বাদ্যযন্ত্র, পাণ্ডুলিপি, সমকালীন শিল্পকলাসহ বাংলাদেশ নানাবিধ ঐতিহ্য দিয়ে সাজানো। তাই যারা সভ্যতা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে চান, তারা বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের দ্বিতীয় তলার নিদর্শন উপভোগ করুন।

জাদুঘরের তৃতীয় তলায় রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন স্বনামধন্য ব্যক্তির প্রতিকৃতি। তাছাড়াও আছে চিত্রকর্ম ও বিশ্বসভ্যতার নানা নিদর্শন। তৃতীয় তলার নিদর্শন দেখলে আপনি আশ্চর্য হয়ে যাবেন। কারণ, সুন্দর সুন্দর চিত্রকর্ম দেখে বিমোহিত হয়ে যায় দর্শনার্থীরা। 

 

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে যাওয়ার উপায় 

ঢাকার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘর অবস্থিত হওয়ার কারণে, বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত হতে খুব সহজেই যাওয়া যায়। আপনাদের সুবিধার জন্য বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে যাওয়ার কিছু উপায় নিচে উল্লেখ করা হলো। 

 

সড়কপথে: ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে খুবই দ্রুত সড়কপথে জাতীয় জাদুঘরে যাওয়া যায়। ট্যাক্সি, সিএনজি, বাস এমনকি রাইড শেয়ারিং গাড়িতে জাদু ঘটিতে যেতে পারবেন। শাহবাগ রোড়ে চলাচল করে এমন গাড়িতে উঠে চলে যান বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে।

 

রেলপথে: যারা ঢাকার বাইরে থাকেন, তাদের জন্য রেলপথে জাদুঘরটিতে ভ্রমণ করতে আসাই ভালো। কারণ, অল্প খরচে কম সময়ে রেলপথে চলাচল করা যায়। জাতীয় জাদুঘরে যাওয়ার জন্য প্রথমে কমলাপুর রেলস্টেশনে যান। তারপর সেখান থেকে গাড়িতে চলে যান জাতীয় জাদুঘরে।

 

নদীপথে: নির্জন ও নিরিবিলি ভ্রমণ করার জন্য নদীপথ হতে পারে আপনার জন্য উপভোগ্য। কারণ, নদীপথে যাত্রা হয় আরামদায়ক। তাই যারা দূরবর্তী জেলায় থাকেন, তারা নদীপথেও জাদুঘরটিতে আসতে পারেন। লঞ্চে করে প্রথমে ঢাকার সদরঘাটে আসবেন। পরে সেখান থেকে গাড়িতে সরাসরি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে চলে যাবেন।

 

আকাশপথে: যারা বিলাসী জীবনযাপন করতে পছন্দ করেন, তারা আকাশপথে জাদুঘরটিতে আসতে পারবেন। এর জন্য আপনার জেলা বা বিভাগের বিমানবন্দর থেকে ঢাকা বিমানবন্দরে আসবেন। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে জাতীয় জাদুঘরে যাবেন। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে জাদুঘরের দূরত্ব বেশি না। অল্প সময়ের মধ্যেই যেতে পারবেন। 

 

জাদুঘর পরিদর্শনের সময়সূচি 

প্রতি বৃহস্পতিবার সহ সরকারি সকল ছুটির দিনে জাতীয় জাদুঘর বন্ধ থাকে। কাল ও মাস ভেদে জাদুঘর পরিদর্শনের সময়সূচি কিছুটা পরিবর্তন হয়। তাছাড়া বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, পহেলা বৈশাখ, একুশে ফেব্রুয়ারি এমন বিশেষ দিনগুলোতে দর্শনার্থীদের জন্য জাদুঘর উন্মুক্ত থাকে।

 

গ্রীষ্মকালে (এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টা ৩০ মিনিট থেকে ৫ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত জাতীয় জাদুঘর খোলা থাকে। আর শীতকালে (অক্টোবর থেকে মার্চ) সকাল ৯ টা ৩০ মিনিট থেকে ৪ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত জাতীয় জাদুঘর খোলা থাকে। প্রতি শুক্রবার বিকেল ৩ টা থেকে রাত ৭ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। রমজান মাসে সপ্তাহের বৃহস্পতি ও শুক্রবার জাদুঘর বন্ধ থাকে। 

জাদুঘরে প্রবেশের টিকিট মূল্য 

জাদুঘরের মূল গেটের পাশে রয়েছে টিকিট কাউন্টার। ১২ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য টিকিট মূল্য ৪০ টাকা। আর ১২ বছরের নিচের বাচ্চাদের জন্য টিকিট মূল্য ২০ টাকা। সার্কভুক্ত দেশের দর্শনার্থীদের জন্য টিকিট মূল্য ৩০০ টাকা। তাছাড়া অন্যান্য দেশগুলোর দর্শনার্থীদের জন্য ৫০০ টাকা। বিভিন্ন দিবসে শিশু ও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য টিকিট ফ্রি করে দেওয়া হয়। 

জাদুঘরে প্রবেশে সতর্কতা 

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে প্রবেশের পর কিছু সতর্কতা নিচে তুলে ধরা হলো।

  • জাদুঘরে প্রবেশের পর উচ্চস্বরে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।
  • জাদুঘরের ভিতরে ছবি তোলার নিয়ম নাই, তাই ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশ করবেন না।
  • বাহিরের যেকোনো খাবার নিয়ে জাদুঘরে প্রবেশ করার অনুমতি নাই। তাই খাবার নিয়ে প্রবেশ করবেন না।
  • জাদুঘরের ভিতরে উচ্চস্বরে কথা বলবেন না।
  • গ্যালারির শোকেসে রাখা নিদর্শনগুলো স্পর্শ করবেন না।

 

জাদুঘরে প্রবেশের ক্ষেত্রে উপরের উল্লিখিত সতর্কতাগুলো অবলম্বন করুন। কারণ, জাদুঘরের নিয়মের বাহিরে যাওয়া যাবে না। তাই বাংলাদেশের একজন স্বাধীন নাগরিক হিসেবে সর্বদা সচেতন থাকুন।

 

শেষ কথা

বাংলাদেশ ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং সভ্যতা সম্পর্কে জানা উচিত সকলের। আর এসব জানার এবং দেখার জন্য বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর উপযুক্ত স্থান। আমাদের বর্তমান জেনারেশনের অনেকের প্রাচীন নিদর্শন সম্পর্কে জানে না। তাই জানার জন্য হলেও জাদুঘর পরিদর্শন করা জরুরি।  তাছাড়াও প্রাচীন আসবাবপত্র দেখতে অনেকের ব্যাপক ইচ্ছা।